দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানের ৩ টি চমৎকার ঘটনা এবং তার ব্যাখ্যা

Md. Emran Hossen
0

 বিজ্ঞান অবিচ্ছিন্নভাবে আমাদের জীবনের সাথে যুক্ত। প্রতিটি ক্ষেত্রে, প্রতিটি পদক্ষেপে আমরা বিজ্ঞানের অস্তিত্ব অনুভব করি যা সর্বদা আমাদের অবাক করে দেয়। আজ আমরা এমনি ৩ টি ঘটনা সম্পর্কে জানব, যা আমরা সর্বদাই দেখে থাকি তবে এর পেছনের বিজ্ঞানটি জানি না।



Image Source: VectorStock

১। কোমল পানীয় বা ঠাণ্ডা পানির বোতলের গায়ে পানি-বিন্দু জমা হওয়া।

আমরা যখন কোল্ড ড্রিঙ্ক বা ঠাণ্ডা পানি পান করি, আমরা সবসময় বোতলটির বাইরের পৃষ্ঠের কিছু পানির ফোঁটা দেখতে পাই। তবে কখনও কি ভেবে দেখেছেন এই জলের ফোঁটাগুলি কোথা থেকে আসে? উত্তরটি কিন্তু বেশ চমৎকার।


ক্যান বা বোতলের ভিতরে যখন ঠাণ্ডা জল বা পানীয় থাকে, এটি বোতলটির উপরিভাগে একটি শীতল পরিবেশ তৈরি করে। যেহেতু বোতলটির বাইরের পৃষ্ঠটি শীতল হয়ে গেছে, এটি পৃষ্ঠের সংস্পর্শে থাকা বাতাসকে শীতল করতে শুরু করে। ফলস্বরূপ, বাতাসে বিদ্যমান বাষ্প শীতল হতে শুরু করে এবং শিশিরবিন্দুতে পৌঁছে। ধীরে ধীরে বাতাসের এই বাষ্প ক্ষুদ্র জলের ফোঁটা তৈরি করে এবং বোতলটির উপরিভাগে জমা হয়।


২. গভীর নিঃশ্বাস নেওয়া বা হাই তোলা

ধরুন আপনি ক্লান্ত বা বেশ ঘুম পেয়েছে। প্রথম কাজটি আপনি কি করবেন? আপনি বিশ্রাম নিতে বসবেন বা বিছানায় গা এলিয়ে দেবেন। তবে এর মধ্যে আপনি আরও একটি কাজ করবেন সেটি হল গভীর নিঃশ্বাস নেবেন, যাকে আমরা হাই তোলা বলি। কিন্তু কেন এটা ঘটে?


মূলত, যখন আমরা ক্লান্ত হয়ে পরি বা নিদ্রা অনুভব করি তখন আমাদের মস্তিষ্কে অক্সিজেনের ঘাটতি হতে থাকে এবং আমরা সকলেই জানি যে আমাদের মস্তিষ্ক সঠিকভাবে কাজ করার জন্য অক্সিজেনের প্রয়োজন। এই কারণে, যখন আমাদের মস্তিষ্কে অক্সিজেনের প্রবাহ হ্রাস পায়, তখন গভীর শ্বাস নেওয়ার জন্য আমাদের শরীর এমনভাবে পরিচালনা করে। এটি প্রচুর পরিমাণে বায়ু নিতে সাহায্য করে যা থেকে প্রয়োজনীয় পরিমাণ অক্সিজেন আমাদের ফুসফুসে প্রবেশ করবে এবং তারপরে আমাদের মস্তিষ্কের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হবে।



আমরা হাই তুলি কেন | হাই তোলার উপকারিতা


আমরা হাই তুলি কেন | হাই তোলার উপকারিতা
Image Source: freepik

আমরা হাই তুলি কেন? ক্লান্ত হলে? ঘুম পেলে? নাকি অন্য কোন কারণে? সাধারণত আমরা বিভিন্ন সময় হাই তুলে থাকি। তবে ঘুম পেলে আমরা এটি বেশি করে থাকি।

অথবা একটানা কোন কাজের ক্লান্তি দূর করতে নিজের অজান্তেই আমরা হাই তুলে থাকি। অনেক সময় শারীরিক দুর্বলতার কারণেও এমনটা হয়ে থাকে। তবে যে কারণেই আমরা হাই তুলে থাকি না কেন, এটি আমাদের বেশ প্রশান্তি দিয়ে থাকে। ক্লান্তি দূর করে আমাদের চনমনে করে তোলে। তাই তো কখনো কখনো আমরা কৌতূহলী হয়ে উঠি এর কারণ জানতে, জানতে চাই এর উপকারিতা এবং অপকারিতা। তো চলুন দেখে নেওয়া যাক কি কি থাকছে এই আলোচনায়-

আমরা হাই তুলি কেন?


মূলত অক্সিজেনের ঘাটতি পূরণ করতে আমরা হাই তুলে থাকি। আমাদের শরীর যখন অবসাদগ্রস্ত হয়, খেয়াল করে দেখবেন সে সময় আমাদের শ্বাসপ্রশ্বাস বেশ ধীরে ধীরে চলে। ফলে আমাদের ফুসফুসে পর্যাপ্ত অক্সিজেন পৌছায় না। আর যেহেতু ফুসফুসই সারা শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ করে থাকে সেহেতু ধীরে ধীরে শ্বাস নেওয়ার কারণে আমাদের শরীরে অক্সিজেনের সরবরাহ কমে যায়। এমন হলে সাধারণত দেহে কার্বন ডাই অক্সাইড এর মাত্রা বেড়ে যায়। এমতাবস্থায় দেহে অক্সিজেন ও কার্বন ডাই অক্সাইড এর ভারসাম্য রক্ষার জন্য দ্রুত অতিরিক্ত কিছু অক্সিজেনের প্রয়োজন পরে। এই প্রয়োজন মেটাতেই আমরা হাই তুলে থাকি। হাই তোলার সময় আমরা চোয়াল প্রসারিত করে একসাথে অনেক বাতাস গ্রহণ করি যা অক্সিজেনের ঘাটতি মেটাতে সহায়তা করে। তবে এটি কিন্তু আমাদের ঐচ্ছিক কোন বিষয় নয়। আমাদের দেহ নিজ থেকেই এই কাজ টি করে থাকে। মস্তিষ্ক সহ দেহের প্রতিটি অঙ্গকে কর্মক্ষম ও চনমনে রাখতে অক্সিজেন অপরিহার্য। কাজেই যদি কোন কারণে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেয় সেটা তাহলে আমরা হাই না তুলে থাকতে পারি না। এমনকি কোন কোন সময় এটি এতটাই অপরিহার্য হয়ে পরে যে চাইলেও আপনি একে আটকে রাখতে পারবে না। চাইলে চেষ্টা করে দেখতে পারেন। 

এবার আসুন অন্য একটি কারণ সম্পর্কে জানা যাক। অনেকক্ষণ কথা না বললে বা মুখ বন্ধ  রেখে কাজ করলে আমাদের মুখের পেশীগুলো অবসাদগ্রস্ত  হয়ে পরে। মুখের পেশীগুলোকে এ অবস্থা থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য আপনাআপনি হাই চলে আসে। আমরা যেমন শরীরের অন্যান্য পেশি ও জয়েন্ট গুলোকে অবসাদ মুক্ত করতে আড়মোড়া ভাঙ্গি কিংবা স্ট্রেস করি, মুখের ক্ষেত্রে হাই তোলা টা ঠিক একই কাজ করে থাকে। 


হাই তোলার উপকারিতা


এতক্ষণে আমরা দেখে ফেলেছি হাই তোলার কারণ এবং এর কিছু উপকারিতা। তবে বিস্তারিত ভাবে চলুন দেখেই নেই হাই তোলার উপকারিতা গুলো। 

১। বাতাসের সাথে অতিরিক্ত অক্সিজেন শরীরে প্রবেশ করে শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতি পূরণ হয়।


২। শরীরে অক্সিজেন ও কার্বন ডাই অক্সাইড এর ভারসাম্য রক্ষা হয়।


৩। মুখের পেশিগুলো স্ট্রেস হয় এবং অবসাদ্গ্রস্থতা দূর হয়।

৪। হৃদপিণ্ডের গতি ঠিক রাখে। 

৫। মুখ প্রসারিত হওয়ার কারণে এটি মুখের জয়েন্টগুলোকে ফ্লেক্সিবল করে।

৬। শারীরিক অবসাদ দূর করে শরীরকে চনমনে করে তোলে। 

৭। শরীরে এবং মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে। এতে করে মস্তিষ্কের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে মস্তিষ্ক ঠাণ্ডা রাখতে সহায়তা করে। ফলে মানসিক দক্ষতা বৃদ্ধি পায় এবং কাজে মনোযোগ ও গতি আসে। 

৮।  নার্ভাস সিস্টেমকে চনমনে করতেও হাই তোলার জুড়ি নেই।

৯। অনেকসময় দ্রুত উচ্চতা বৃদ্ধি বা পরিবর্তনের কারণে অস্বস্তি তৈরি হয়ে থাকে। গবেষকদের মতে এ ক্ষেত্রে হাই তুললে অস্বস্তি বোধ কেটে যায়। উচ্চতা ভীতি হলেও এটি বেশ কাজে দেয়। অধিক উচ্চতায় উঠলে অনেকসময় আমরা মাথা ঝিম ঝিম করা, বমি বমি ভাব সহ বিভিন্ন রকম পরিস্থিতির সম্মুখীন হই। এসব ক্ষেত্রে হাই তুললে অনেক সময় কিছুটা প্রশান্তি পাওয়া যায়।  

১০। বিমান ভ্রমণ বা লিফটের কারণে যে দ্রুত উচ্চতা পরিবর্তন হয় তা অনেকের শ্রবণ সমস্যা তৈরি করে থাকে। হাই তুললে এ সমস্যা দূর হয়। বিজ্ঞানীরা হাই তোলা কে কানের “ডিফেন্স রিফ্লেক্স” হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন। 

ঘন ঘন হাই তোলা কি ক্ষতিকর?

আমরা এতক্ষণ হাই তোলার অনেক গুলো উপকারিতা দেখলাম। নিঃসন্দেহে এটি একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ শারীরবৃত্তিয় কাজ। তবে এর মানে এই নয় যে ঘন ঘন হাই তোলাও ভাল কিছু। না, হাই তোলার কোন ক্ষতি নেই, তবে ঘন ঘন হাই তোলার পেছনে যে সব কারণ থাকতে পারে সেগুলো আপনাকে কিছু টা চিন্তিত করতে পারে। ঘন ঘন বা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হাই তোলার পেছনে যে কারণগুলো থাকতে পারে তা হল-

১। অনিদ্রা ও ঘুম কম হওয়া।

২। শারীরিক দুর্বলতা ও পুষ্টি ঘাটতি থাকা। 

৩। হৃদপিণ্ডের ভেতরে ও বাইরে রক্তক্ষরণ হওয়া। 

৪। পরিশ্রম কম করা বা অলস জীবনযাপন করা। 

৫। শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে অক্ষমতা। 

৬। অতিরিক্ত অলসতা ও ক্লান্তি।

৭। ফুসফুসের কর্মক্ষমতা হ্রাস পাওয়া।

এছাড়াও আরও কিছু অপ্রধান কারণ রয়েছে। তবে আপনার যদি স্বাভাবিকের তুলনায় অধিক হাই ওঠে সেক্ষেত্রে আপনার উচিত ডাক্তারে শরণাপন্ন হওয়া।


মানুষ ছাড়া অন্য কোন প্রাণী কি হাই তোলে?

হ্যাঁ, মানুষ ছাড়াও আরও অনেক প্রাণী আছে যারা হাই তোলে। তবে মূলত মেরুদণ্ডী প্রাণীরাই হাই তুলে থাকে। স্বাভাবিক ভাবে হাই তোলা মানুষের ক্ষেত্রে একটি সাধারণ ঘটনা হলেও অন্যান্য মেরুদণ্ডী প্রাণীর মধ্যেও এ বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। এদের মধ্যে আফ্রিকান হাতি, শিম্পাঞ্জি, উট, গরিলা, ঘোড়া , সিংহ সহ আরও অনেক মেরুদণ্ডী প্রাণী রয়েছে। অনেকেই আমরা গৃহপালিত প্রাণী পুষে থাকি। একটু খেয়াল করলে দেখবেন আপনার কুকুর বা বিড়ালটি মাঝে মাঝে হাই তুলছে।


হাই তোলা কি সংক্রামক?

হ্যাঁ, হাই তোলা একটি সংক্রামক ঘটনা। আপনি আপনার আশেপাশে যদি কাউকে হাই তোলা দেখেন তাহলে দেখবেন আপনারও হাই উঠছে। শুধু তাই নয়, আপনি যদি হাই তোলার কথা মনে মনে ভাবেন তাহলেও আপনার হাই ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে। চাইলে ছোট একটি পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। ইউটিউবে হাই তোলার অনেক ভিডিও পাবেন। হতে পারে সেটি মানুষের বা অন্য প্রাণীদের হাই তোলার ভিডিও। কোন একটি ভিডিও মনোযোগ দিয়ে দেখতে থাকুন। এরপর দেখবেন কোন কারণ ছাড়াই আপনিও হাই দিচ্ছেন। ব্যাপারটি বেশ মজার তাই না? তবে হাই তোলার এই সংক্রমণ ব্যাপারটি শুধু মানুষ নয় অন্য প্রাণীদের ক্ষেত্রেও হয়ে থাকে। তবে এটি একটি স্বাভাবিক ঘটনা। এতে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। বরঞ্চ গবেষণা মতে, এই সংক্রামক ঘটনা আপনার সম্পর্কে ইতিবাচক ধারনা দেয়।


হাই তোলার উপর আবহাওয়ার প্রভাব 

হাই তোলার উপর কিছু কিছু ক্ষেত্রে আবহাওয়ার প্রভাব থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে মানুষ গরমের চেয়ে শীতের দিনে বেশি হাই তোলে। অর্থাৎ তাপমাত্রা কমলে হাই তোলার হার বাড়ে। গবেষণা মতে শীতের দিনে ৪৫ শতাংশ মানুষ হাই তোলে। অপরদিকে, গরমের দিনে মাত্র ২৪ শতাংশ মানুষ হাই তোলে। তবে এ ব্যাপারটি শুধু মানুষের ক্ষেত্রেই ঘটে না। কিছু প্রাণীর ক্ষেত্রেও এই ব্যাপারটি লক্ষ করা যায়। ইঁদুরের উপর এক গবেষণায় দেখা গেছে যে তারাও শীতের সময় গরমের সময়ের চেয়ে বেশি হাই তোলে। 




৩. ঘামের পরে শরীর ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়া


আমরা বিভিন্ন কারণে ঘেমে থাকি। শারীরিক পরিশ্রম করার পরে বা প্রচণ্ড গরমে সাধারণত আমাদের ঘাম হয়। তবে আপনি কি কখনও খেয়াল করেছেন যে ঘামের পর আমাদের শরীর ঠাণ্ডা হয়ে যায়? হ্যাঁ, এটি ঘটে। ঘামের পরে যদি আপনি আপনার শরীর স্পর্শ করেন তবে আপনি অনুভব করবেন যে আপনার শরীরের তাপমাত্রা হ্রাস পেয়েছে।

তো কেন এটি ঘটে?

যখন আমরা ঘামি তখন আমাদের লোমকূপ দিয়ে নোনতা পানি আমাদের শরীর থেকে বেরিয়ে আসে যাকে আমরা ঘাম বলি। শারীরিক পরিশ্রম যতক্ষণ অব্যাহত থাকে বা আমরা গরম অনুভব করি ততক্ষণ এই প্রক্রিয়াটি চলতে থাকে। এই ঘাম বাতাসের সংস্পর্শে আসার ফলে ধীরে ধীরে বাষ্পীভূত হতে থাকে। প্রক্রিয়া চলাকালীন এই ঘামের বিন্দুগুলি আমাদের দেহ থেকে সুপ্ত তাপ শোষণ করে। ফলস্বরূপ, ত্বকের তাপমাত্রা ধীরে ধীরে হ্রাস পায়। আর এভাবেই আমাদের শরীর ঘামের পরে ঠাণ্ডা হয়ে যায়।



Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.
Post a Comment (0)
">
Thanks for visiting our website! Learn More
Not Now!